ছাগলের বিভিন্ন জাত পরিচিতি

Goat-breed-ছাগলের-জাত

অন্যান্য সকল প্রাণীর মতো ছাগলেরও বিভিন্ন জাত রয়েছে। ছাগলের বিভিন্ন জাতের মধ্যে তাদের শারীরিক গঠন, রং ও অন্যান্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আপনি কি ছাগল পালনের কথা ভাবছেন? সেক্ষেত্রে ছাগলের বিভিন্ন জাত পরিচিতি জেনে নিতে পারেন, যা আপনার ভবিষ্যতে ছাগল পালনে কাজে লাগবে।

ছাগলের বিভিন্ন জাত পরিচিতি

ছাগলের বিভিন্ন ধরনের জাত রয়েছে, যাদের মধ্যে কিছু দেশি জাত আমরা পালন করে থাকি। কিন্তু বাংলাদেশে এখন বিদেশি জাতের ছাগলও পালন করা হচ্ছে। বিদেশি জাতের ছাগল পালন করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এসকল জাতের ছাগল বেশি পরিমাণ দুধ প্রদান করে এবং মাংসের পরিমাণও তুলনামূলক বেশি। তাই অনেক খামারি এখন বিদেশি ছাগলের জাতের দিকে ঝুকছে।

তাই বলে দেশি ছাগলের চাহিদা যে নেই, তা মোটেও কিন্তু নয়। সেটা ছাগল হোক কিংবা অন্য কিছু, দেশি জিনিস জিনিসের চাহিদা বাংলাদেশে সবসময়ই বেশি। দেশি ছাগলের দুধ স্বাদ অন্যান্য ছাগলের চেয়ে তুলনামূলক বেশি এবং মাংসের চাহিদাও বাজারে বেশি লক্ষ্য করা যায়।

একজন খামারি কি উদ্দেশ্যে ছাগল পালন করতে চান, সেটি ভেদে ছাগলের জাতগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা: এক. দুধ উৎপাদনের উদ্দেশ্যে, দুই. মাংস উৎপাদনের উদ্দেশ্যে।

কিছু কিছু ছাগল রয়েছে যারা অন্যান্য ছাগলের চেয়ে বেশি করে দুধ প্রদান করে। আবার কিছু কিছু ছাগল রয়েছে যাদের মাংসের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে। যেসব খামারি দুধের জন্য ছাগল পালন করছেন তাদের উচিত যে সকল ছাগল বেশি পরিমাণ দুধ উৎপাদন করে সেই সকল জাতের ছাগল পালন করা।

অপরদিকে যেসব খামারিরা ছাগলের মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে ছাগল পালন করতে ইচ্ছুক, তাদের উচিত বেশি মাংস উৎপাদনকারী ছাগল পালন করা। এক্ষেত্রে খামারিরা বড় রকম উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। আসুন এবার জেনে নেই, বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাগলের জাতগুলো কোনগুলো এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি সেটি সম্পর্কে।

১. ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল

barbari goat - বারবারি ছাগল
© wikipedia.org

বাংলাদেশের সবচেয়ে সুপরিচিতি ছাগল হচ্ছে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, যেটিকে আবার কুষ্টিয়া গ্রেড নামেও বিদেশে আখ্যায়িত করা হয়। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায় এবং এটিকে দেশি ছাগল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্ল্যাক বেঙ্গল একটি মাঝারি আকারের ছাগল, যার ওজন সাধারণত ২০ থেকে ৩০ কেজির মধ্যে হয়ে থাকে। তবে স্ত্রী ছাগলের তুলনায় পুরুষ ছাগলের ওজন তুলনামূলক বেশি হয়।

একটি ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার দুধ প্রদান করতে পারে। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের রং প্রধানত কালো হয়ে থাকে। তবে কালোর পাশাপাশি খয়েরি কিংবা সাদা রঙেরও হতে পারে। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের খাদ্য চাহিদা অন্যান্য ছাগলের চেয়ে তুলনামূলক কম এবং গাছের পাতা, ঘাস, খসা জাতীয় শুকনো খাবার ইত্যাদি খেয়েই ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল জীবন যাপন করতে সক্ষম।

এই জাতের ছাগলের মাংসের চাহিদা বাজারে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে গরুর মাংসের চেয়ে এই জাতের ছাগলের মাংসের দাম বেশি হয়ে থাকে। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ছয় থেকে সাত মাস অন্তর বাচ্চা দিয়ে থাকে। প্রতিবার দুই থেকে তিনটি করে বাচ্চা প্রসব করে।

২. রামছাগল বা যমুনাপারি ছাগল

রাম ছাগল আমাদের অতি পরিচিত একটি ছাগলের জাত। এই ছাগল অন্যান্য ছাগলের জাতের চেয়ে আকারে বড় হয়ে থাকে। রাম ছাগলকে অনেকে যমুনাপাড়ি ছাগল বলেও ডাকে। রাম ছাগল মুলত বিদেশি জাতের ছাগল।

এটিকে যমুনাপাড়ি ছাগল বলার কারণ হচ্ছে এই জাতের ছাগলের আদিনিবাস ভারতের উত্তর প্রদেশের যমুনা ও গঙ্গা মধ্যবর্তী এলাকায়। তবে রাম ছাগলকে পুরোপুরি বিদেশি জাতের ছাগলের জাত বলাও যায় না। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলেও রাম ছাগল দেখতে পাওয়া যায়। 

রাম ছাগল আকারে বড়, তাই মাংসের জন্য এই ছাগল পালন করা যেতে পারে। তবে রাম ছাগলের মাংস ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মতো সুস্বাদু নয়। তবে রাম ছাগলের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। একটি রাম ছাগল দৈনিক দুই লিটার পর্যন্ত দুধ দিতে পারে। রাম ছাগলের দুধ সুমিষ্টির পাশাপাশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এতে ফ্যাটের পরিমান বেশি থাকে।

রাম ছাগলের চামড়ার রং সাদা, কালো, হলুদ, বাদামী হয়ে থাকে। রাম ছাগলকে চেনার সবচেয়ে সহজ চিহ্ন হচ্ছে এদের লম্বা কান। রাম ছাগলের কানের দৈর্ঘ্য ৬ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। একটি রাম ছাগলের ওজন গড়ে ৭০ থেকে ৯০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। যদিও পুরুষ রাম ছাগলের তুলনায় স্ত্রী রাম ছাগলের ওজন প্রায় অর্ধেক হয়ে থাকে।

রাম ছাগল বছরে একবার বাচ্চা দিয় এবং প্রতিবার একটি করে (ক্ষেত্রবিশেষে দুইটি করেও) বাচ্চা প্রসব করে। এই ছাগল আকারে বড় হওয়ায় বাজারে ভালো দামে বিক্রি করা সম্ভব হয়।

৩. বিটল ছাগল

বাংলাদেশে খুব একটা জনপ্রিয় না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ, যেমন ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে বিটল ছাগল অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই ছাগলে শুধু মাংসের জন্যেই নয়, পাশাপাশি দুধের জন্যেও পালনের উপযুক্ত। ছাগলের বিভিন্ন জাত পরিচিতি অংশে এবার জানবো বিটল ছাগল নিয়ে।

বিটল ছাগল মাঝারি সাইজের ছাগল, যাদের গড় ওজন ৪০ কেজি থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। ৮০ সেন্টিমিটার লম্বা এই ছাগলের কান রাম ছাগলের মতোই লম্বা হয়ে থাকে। তবে গায়ের রং দেখে খুব সহজে এদের আলাদা করা যায়। বিটল ছাগলের শরীরের রং কালোর উপরে হলুদ, বাদামী, খয়েরি রঙের বড় বড় ফোটা দেখা যায়।

এই জাতের ছাগলে দৈনিক তিন থেকে চার লিটার দুধ দিতে সক্ষম। অতএব বুঝতেই পারছেন, দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিটল ছাগল একেবারে উপযুক্ত। অনেকেই দুধ উৎপাদন করার জন্য বিটল ছাগল নির্বাচন করে থাকেন। বিটল ছাগল বছরে একটি করে বাচ্চা প্রসব করে।

৪. বোয়ার ছাগল

Boer goat - বোয়ার ছাগল
© wikipedia.org

ছাগলের বিভিন্ন জাত পরিচিতি লেখাটিতে ইতিমধ্যে আমরা তিনটি ছাগলের জাত সম্পর্কে জেনেছি। এবার আমরা জানবো একটি বিদেশি জাতের ছাগলের সম্পর্কে, যা মাংস উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।

আপনার উদ্দেশ্য যদি শুধু মাংস উৎপাদন হয়ে থাকে তবে বেয়ার ছাগল আপনার খামারের উপযুক্ত ছাগলের জাত। এই জাতের পুরুষ ছাগলের ওজন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। অপরদিকে বেয়ার জাতের স্ত্রী ছাগলের ওজন ৯০ থেকে ১২০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

এই জাতের ছাগলের ওজন প্রতি সপ্তাহে প্রায় দুই কেজি করে বাড়ে। বুঝতেই পারছেন এই জাতের ছাগল পালনে কতটুকু সফলতা আশা করা যাবে। তবে বাংলাদেশে এই জাতের ছাগল খুব একটা দেখা যায় না। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত দেশে এই ছাগল বিপুল সংখ্যক পালন করা হয়।

৫. বারবারি ছাগল

barbari goat - বারবারি ছাগল
© wikipedia.org

ছাগলের বিভিন্ন জাত পরিচিতি অংশে আবার একটি বিদেশি জাতের ছাগল নিয়ে আলাপ করবো। বারবারি ছাগলের আদিনিবাস সুদূর আফ্রিকার দেশ সোমালিয়াতে। এই জাতের ছাগল এখন দক্ষিণ এশিয়াতেও পালন করা শুরু হয়েছে। এই জাতের ছাগল সহজে যেকোনো পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

বারবারি ছাগল আকারে ছোট এবং ওজন গড়ে ২০ থেকে ৩০ কেজির মধ্যে হয়ে থাকে। মাংস ও দুধের জন্য এই ছাগল একেবারে উপযুক্ত। ছাগলটির খাদ্য চাহিদা তুলনামূলক ভাবে কম এবং ঘাস জাতীয় খাদ্যই বারবারি ছাগলের প্রধান খাবার। তবে অত্যন্ত সম্ভাবণা পূর্ণ এই জাতের পালন বাংলাদেশে খুবই কম হয়ে থাকে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, উপযুক্ত জাতের ছাগল নির্বাচন না করলে কিন্তু খামারিরা বড় রকম লসের দিকেও ধাবিত হতে পারেন। তাই কোন উদ্দেশ্যে ছাগল পালন করতে চান সেটি বিবেচনায় রেখে ছাগলের জাত নির্বাচন করা জরুরী। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি একজন অভিজ্ঞ খামারির কাছে ছাগলের বিভিন্ন জাত পরিচিতি সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *