ছাগলের পিপিআর রোগ – কারণ, লক্ষন, প্রতিকার, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

ছাগলের-পিপিআর-রোগ

গৃহপালিত পশু হিসেবে ছাগল খামারিদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ছাগল পালন করা অন্যান্য যেকোনো গৃহপালিত প্রাণী থেকে সহজ ও কম পরিশ্রমের কাজ হলেও ছাগলের প্রতি যত্নশীল না হলে ছাগল পালনে বড় রকম ধরা খেয়ে যেতে পারেন। আজকে আলোচনা করব ছাগলের খুবই কমন একটি রোগ পিপিআর নিয়ে। ছাগলের পিপিআর রোগের চিকিৎসা, লক্ষণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ ব্যবস্থা, প্রতিকার ও ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে আমাদের এই লেখাটি সাজানো হয়েছে।

পিপিআর কি?

ছাগলের পিপিআর রোগ একটি মরণঘাতি রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে গবাদিপশুর মুখ থেকে হলুদে এক ধরনের পদার্থ নিঃসৃত হতে দেখা দেয়, ছাগলের জ্বর আসে, ডাইরিয়া হয়, শ্বাসকষ্ট হয় ইত্যাদি লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে ছাগলের মৃত্যুর হার প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ হয়ে থাকে। আবার এই রোগের চিকিৎসা করাতে গেলে খরচও বেড়ে যায়। যার কারণে একবার ছাগলের খামারে যদি পিপিআর রোগে আক্রান্ত ছাগল চিহ্নিত হয়, সেক্ষেত্রে খামারিদের বড় একটি লোকসানের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

এই লেখাটিতে আমরা যা যা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি–

  • ছাগলের পিপিআর রোগের কারণ
  • ছাগলের পিপিআর রোগ কোন বয়সে হয়?
  • ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ 
  • ছাগলের পিপিআর রোগের প্রতিকার
  • ছাগলের পিপিআর রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা
  • ছাগলের পিপিআর রোগের চিকিৎসা
  • ছাগলের পিপিআর রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
  • ছাগলের পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন

ছাগলের পিপিআর রোগ কী?

আমাদের সকলেই ছাগলের পিপিআর রোগ সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত। ছাগলের পিপিআর একটি ভাইরাসজনিত রোগ, মরবিলি যা নামক ভাইরাস হতে এক ছাগল থেকে অন্য ছাগলের ছড়ায়। এই ভাইরাসটি দ্বারা আক্রান্ত হলে একটি ছাগলের মধ্যে যে সকল লক্ষণ প্রকাশ পায় তাকে বিজ্ঞানীরা Peste des Petits Ruminants (PPR) বা পিপিআর রোগ নামে আখ্যায়িত করেছেন।

পিপিআর রোগের সাধারণত কম বয়সী ও বয়স্ক উভয় ধরনের ছাগলই আক্রান্ত হয়, কিন্তু কম বয়সী ছাগলের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার অনেক বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্ক ছাগল কয়েকদিনের মধ্যেই সেরে ওঠে।

ছাগলের পিপিআর রোগের কারণ

পূর্বে উল্লেখ করেছি, ছাগলের পিপিআর রোগ একটি ভাইরাস জনিত রোগ। ভাইরাস এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র জৈবকণা, যা কিনা কোনো প্রাণীদেহে প্রবেশ করলেই শুধুমাত্র জীবের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। কিন্তু একবার প্রাণীদেহ থেকে বের হয়ে গেলে তা জড় পদার্থের ন্যায় আচরণ করে।

ভাইরাস খুব দ্রুত নিজেদের বংশবিস্তার করতে সক্ষম এবং সাধারণত একটি প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে স্থানান্তরিত হয়। যখন একটি প্রাণী ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন আক্রান্ত প্রাণীটি অন্যান্য সুস্থ প্রাণীদের আক্রান্ত করতে পারে। যা স্পর্শে হতে পারে, কিংবা স্পর্শ ছাড়াই উভয় পদ্ধতিতে ছড়াতে সক্ষম। 

যে ভাইরাসটির কারণে ছাগলের পিপিআর রোগ হয় সেটি হচ্ছে মরবিলি ভাইরাস। ছাগলের লালা, নাক বা মুখ থেকে বের হওয়া তরল পদার্থ ইত্যাদি থেকে রোগটির ভাইরাস ছাড়িয়ে থাকে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এই রোগটি ছড়ানোর বড় একটি কারণ।

ছাগলের পিপিআর রোগ কোন বয়সে হয়?

যেকোনো বয়সী ছাগল পিপিআর রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পিপিআর রোগে আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। একটি কম বয়সী ছাগলের পিপিআর রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যতটুকু ঠিক ততটুকুই বয়স্ক ছাগলের পিপিআর রোগ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যেহেতু এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ, তাই আক্রান্ত ছাগল থেকে অন্যান্য সুস্থ ছাগলগুলো এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। তবে এই প্রাণঘাতী রোগের কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর হার কম বয়সী ছাগলের। অপরদিকে, বয়স্ক ছাগলের মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম। 

ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ কি

ছাগলের পিপিআর রোগের কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে। যা প্রকাশ পেলে আপনি খুব সহজেই রোগটি চিহ্নিত করতে পারবেন৷ ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে–

ছাগলের পিপিআর : purulent eye and nose discharges
© fao.org
ছাগলের পিপিআর : inflamed (reddened) eye membranes
© fao.org
  1. হঠাৎ করেই ছাগলের জ্বর আসে। ছাগলের পুরো শরীর গরম হয়ে যায়। তাপমাত্রা ১০৫ থেকে ১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে হতে পারে।
  2. ছাগলের নাক, কান, মুখ এমনকি চোখ থেকেও এক ধরনের গাঢ় তরল পদার্থ বের হতে থাকে। এই তরল পদার্থটি কয়েকদিন পর আরো গাঢ় হয়ে হলদে এক ধরনের পদার্থে রূপ নেয়।
  3. নাক থেকে নিঃসৃত হওয়া হলদে পদার্থটির কারণে অনেক সময় নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যার দরুন ছাগলের শ্বাসকষ্ট হয়।
  4. পিপিআর রোগের আরেকটি বড় লক্ষণ হচ্ছে আক্রান্ত ছাগলটি ডায়রিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যায়।
  5. ছাগলে জিহ্বা, দাঁত, মুখের তালু ইত্যাদি নরম অংশে এক প্রকার ক্ষুদ্র ঘা দেখতে পাওয়া যায়, যা সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব।
  6. ছাগলের চোখও এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। ছাগলের চোখ থেকে এক ধরনের সাদা পদার্থ বের হতে থাকে, যা চোখকে অনেক সময় ঢেকে রাখতে পারে।
  7. পিপিআর রোগে আক্রান্ত হলে ছাগলটির ওজন খুব দ্রুততার সাথে কমতে থাকে।
ছাগলের পিপিআর : early mouth lesions showing areas of dead cells
© fao.org
ছাগলের পিপিআর : PPR in a goat: swollen, eroded lips
© fao.org

ছাগলের পিপিআর রোগের প্রতিকার

মরণঘাতী এই রোগ থেকে ছাগলকে প্রতিরোধ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই পূর্ব থেকেই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। যদিও পিপিআর রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে এর একটি টিকা রয়েছে, যা ব্যবহার করলে ছাগলের পিপিআর রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। যার প্রয়োগের ফলে ছাগল সহজে পিপিআর রোগে আক্রান্ত হবে না।

তো, কোথায় পাবেন পিপিআর রোগের প্রতিরোধকারী টিকাটি? বাংলাদেশের প্রত্যেকটি উপজেলার প্রাণী সম্পদ দপ্তরে পিপিআর রোগ প্রতিরোধকারী টিকাটি পেয়ে যাবেন। একটি ছাগলকে মাত্র ১ সিসি পিপিআর প্রতিরোধী টিকা প্রয়োগ করতে হবে। টিকা প্রয়োগ করার ১৫ দিনের মধ্যে ছাগলটির শরীরে পিপিআর রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে।

কিন্তু এই ক্ষমতা শুধুমাত্র এক বছর স্থায়ী হয়। তাই এক বছর পর পর এই রোগের টিকাটি দিতে হবে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি ছয় মাস পরপর পিপিআর রোগের রোগ প্রতিরোধকারী টিকা প্রয়োগ করা হয়। পিপিআর রোগ প্রতিরোধী টিকাটি প্রাণী সম্পদ দপ্তর বিনামূল্যেই খামারিদের প্রদান করে থাকে।

ছাগলের পিপিআর রোগের প্রতিরোধ

পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করাই ছাগলের পিপিআর রোগের প্রতিরোধের কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে। নিয়মিত ছাগলকে পিপিআর রোগ প্রতিরোধের টিকা প্রয়োগ করলে ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই খামারিদের উচিত প্রতি ছয়মাস পর পর পিপিআর রোগ প্রতিরোধী টিকাটি ছাগলের উপর প্রয়োগ করা। 

এর পাশাপাশি যদি কোনো ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় তবে দেরি না করে ছাগলটিকে অন্য ছাগলদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখতে হবে। পিপিআর রোগে আক্রান্ত ছাগলের মুখ, নাক, দাঁত, চোখ ইত্যাদি থেকে নিঃসৃত পদার্থটি মাটিতে পড়লে তা দ্রুতই অপসারণ করতে হবে এবং পিপিআর রোগে আক্রান্ত ছাগল মারা গেলে ছাগলের দেহটি দূরে কোথাও মাটির গভীরে চাপা দিতে হবে। 

পিপিআর রোগটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ, তাই অন্যান্য সুস্থ ছাগল যাতে এই ভাইরাসের সংস্পর্শে না আসে সেজন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এছাড়া ছাগল রাখার স্থানটি প্রতিনিয়তই জীবাণুননাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।

[ বিশেষভাবে দ্রষ্টব্যঃ যে কোন ওষুধ খওয়ানোর আগে বা টিকা দেওয়ার আগে অবশ্যই রেজিস্টার্ড প্রাণী চিকিৎসকের বা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ নিতে হবে এবং পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। বিপদের সময় দ্রুত সেবা পেতে প্রাণী চিকিৎসকের বা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বার আপনার কাছে অবশ্যই রাখবেন ]

ছাগলের পিপিআর রোগের চিকিৎসা

ছাগলের পিপিআর রোগ একটি মরণঘাতি রোগ। এ রোগ থেকে কোনো ছাগলের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা একেবারেই কম। তারপরেও যদি আপনি কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ছাগলের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।

যদিও ছাগলের পিপিআর রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে চিকিৎসকগণ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন যার অনুসরণ করলে ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ অনেকটাই কমে যায় এবং ছাগলের সুস্থতার দিকে ধাবিত হয়। ছাগলের পিপিআর রোগের চিকিৎসা নিম্নরূপ–

  • এন্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী সংক্রমণ রোধ করতে হবে। এতে মৃত্যুর হার যথাসম্ভব কমানো যায়।
  • অক্সিটেট্রাসাক্লিন ও ক্লোর টেট্রাসাইক্লিন নামক দুটি রোগ ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ দুটি ওষুধ শ্বাসতন্ত্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
  • ফুড থেরাপি এবং জীবাণুরোধী ওষুধ, যেমন: ইনরোফ্লোক্সাসিন, সেফটিফোর নির্দিষ্ট ডোজে ব্যবহার করতে চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছেন।
  • ছাগলের মুখের ক্ষত সারানোর জন্য ৪.৫% বরো-গ্লিসারিন দিয়ে মুখ ধুয়ে দিতে হবে।
  • চোখের চারপাশে, নাক, মুখ সর্বদাই পরিষ্কার রাখতে হবে। এর জন্য পরিষ্কার কাপড় এবং কটন টিউব ব্যবহার করতে হবে। প্রতিদিন অন্তত তিন থেকে চারবার কাজটি করতে হবে।

ছাগলের পিপিআর রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

একটি ছাগল একবার পিপিআর রোগে আক্রান্ত হলে ছাগলের ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং নাক, মুখ, চোখ ইত্যাদি থেকে এক প্রকার ঘন তরল পদার্থ বের হতে থাকে। এমন কি ছাগলের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যদিও পিপিআর রোগের মূল কারণ মরবিনি ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম এমন কোনো চিকিৎসা বের হয়নি, কিন্তু কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহারে ফলে ছাগলের কষ্ট অনেকটা লাঘব করা যেতে পারে।

ডায়রিয়ার ফলে ছাগলের দেহ থেকে পানি এবং লবণ বের হয়ে যায়। তাই ছাগলকে বেশি করে পানি এবং খাবারের সাথে সামান্য লবণ মিশ্রিত করে খাওয়াতে হবে। এছাড়া নাকে ও মুখে সাদা ঘন পদার্থটি জমে শক্ত হয়ে যেতে পারে। এর ফলে ছাগলটির শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাই নিয়মিত পরিষ্কার কোনো কাপড় দিয়ে আবরনী পদার্থটি অপসারণ করতে হবে। দৈনিক তিন থেকে চার বার এই কাজটি করা যেতে পারে।

তবে আমাদের ঘরোয়া চিকিৎসার প্রতি নির্ভর হলে চলবে না। এর পাশাপাশি পূর্বে উল্লেখিত ঔষধগুলোও প্রয়োগ করতে হবে।

ছাগলের পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন

ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন ভায়ালে হিমায়িত অবস্থায় থাকে। ভায়ালের সাথে ১০০মিলি ডাইলুয়েন্ট থাকে। এ টিকা সরবরাহকৃত ডাইলুয়েন্টের ভেতর ভালো করে মিশিয়ে  প্রতিটি ছাগলকে ঘাড়ের চামড়ার নীচে ১ মিলি ইনজেকশন করে দিতে হয়। ছাগলের ৩ মাস বয়সে প্রথম এ টিকা দিতে হয়। এ টিকা এক বছর অন্তর দিতে হয়। উল্লে­খ্য, গর্ভবতী ছাগলকেও এ টিকা দেওয়া যায় ।

সূত্রঃ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ( https://mofl.gov.bd/ )

ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন এর দাম কত

ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন এর দাম মাত্র ৫০ টাকা। তবে এই মূল্য যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে।

ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন দেয়ার নিয়ম

  • টিকা যেই জায়গা থেক নেয়া হবে সেখান থেকে কুল ভ্যান অথবা ফ্লাক্সে পর্যাপ্ত বরফ দিয়ে বহন করতে হবে।
  • ডিসপোসেবল সিরিঞ্জ দিয়ে টিকা দিতে হবে এবং সব রকম জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • টিকা দেয়ার পূর্বে ১০০ মিলি ডাইলুয়েন্টের বোতল কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা +৪ ডিগ্রি থেকে +৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে ব্যবহার করতে হবে।
  • ডাইলুয়েন্ট মিশ্রিত টিকা ১-২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
  • প্রতি ছাগলের জন্য ১ মিলি. করে চামড়ার নিচে দিতে হবে।
  • ছাগলের বাচ্চার বয়স ৪ মাস হলেই এ টিকা দেওয়া যাবে। ২ মাস বয়সের বাচ্চাকেও এ টিকা দেয়া যায়।
  • যেসব এলাকায় ছাগলের রোগ বালাই বেশি হয় সেসব এলাকায় ১ বছর পর পুনরায় (বুস্টার ডোজ) টিকা প্রয়োগ করতে হবে।
  • বাচ্চা প্রসবের ২৫-৩০ দিন আগে গর্ভবতী ছাগলকে এ টিকা প্রয়োগ করা যাবে না।
  • সুস্থ ও সবল ছাগলকে টিকা দিতে হবে। পুষ্টিহীন ও দুর্বল ছাগলকে এ টিকা প্রয়োগ না করাই উত্তম। পিপিআর এ আক্রান্ত ছাগলকে এ টিকা প্রয়োগ করা যাবে না।
  • টিকা দেয়ার ২৫-৩০ দিন আগে কৃমিনাশক খাওয়ানো গেলে টিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
  • খামারে নতুন ছাগল আনলে ১০ দিন পর অবশ্টিযই পিপিআর টিকা দিতে হবে।
  • ব্যবহৃত টিকার বোতল বা যদি টিকা বেচে যায় তা যথাযথ ও সঠিকভাবে নষ্ট করে ফেলতে হবে।

শেষ কথা

পিপিআর একটি মরণঘাতী রোগ। এ রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। কিন্তু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ছাগলের মৃত্যুর হার অনেকটা কমিয়ে আনা যায়। একজন খামারি উচিত পিপিআর রোগের কথা মাথায় রেখে সর্বদাই সতর্কতা অবলম্বন করা ও খামারের চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। নিয়মিত জীবানুনাশক দিয়ে খামার পরিষ্কার রাখতে হবে।

এর পাশাপাশি কোনো ছাগল যদি পিপিআর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়, সেক্ষেত্রে দ্রুততার সাথে ছাগলটাকে আলাদা করে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কোনো কারণে একটি ছাগল মারা গেলে সেটিকে দূরে কোথাও মাটি চাপা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে পিপিআর রোগটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এক ছাগল থেকে অন্য ছাগলে খুব সহজে ছড়াতে পারে।

এছাড়া পিপিআর রোগ প্রতিরোধী টিকাটি প্রতি ছয় মাস অন্তর ছাগলকে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই পিপিআর রোগের হতে মুক্তির সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। ছাগলের পিপিআর রোগের চিকিৎসা করানোর সময় একজন অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

সূত্র ১ঃ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ( https://mofl.gov.bd/ )
সূত্র ২ঃ কৃষিবিদ ডা. সুচয়ন চৌধুরী, ভেটেরিনারি সার্জন

2 thoughts on “ছাগলের পিপিআর রোগ – কারণ, লক্ষন, প্রতিকার, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *