ছাগল পালন পদ্ধতি – মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন

মাচা-পদ্ধতিতে-ছাগল-পালন

বর্তমানে বেশ কয়েকটি পদ্ধতিতে ছাগল পালন করা যায়। যার মধ্যে একটি হচ্ছে মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন। বর্তমানে খামারিরা এই পদ্ধতিতে ছাগল পালনে বেশি উৎসাহী। কেননা এই পদ্ধতিতে ছাগল পালন করার বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা রয়েছে।

একটি ছাগলের খামার দেওয়ার আগে সবার প্রথমে আমাদের চিন্তা করতে হয় ছাগলের বাসস্থানের কথা। অনেকেই মাটির উপর ছাগল পালন করেন। কিন্তু এতে নানা রকম অসুবিধা রয়েছে। মাটির উপর ছাগল পালন করলে ছাগলের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়ে যায়।

মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন

বিশেষ করে চর্ম রোগে ছাগল খুব দ্রুতই আক্রান্ত হয়ে যায়। কেননা বেশিরভাগ সময় মাটিতে পড়ে থাকা পানি থেকেই রোগের জীবাণু ছাগলে ছড়ায়। তবে মাচা পদ্ধতিতে যদি আপনি ছাগল পালন করেন তবে এ সকল অসুবিধাগুলো পাশ কাটিয়ে চলা সম্ভব।

মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করাটা অত্যন্ত সহজ। অনেকেই মনে করেন এই পদ্ধতিতে ছাগল পালন করলে টাকা বেশি লাগে। অথচ এটি মোটেও সঠিক নয়। বর্তমানে বাঁশের মাচা খুবই সস্তা দামে পাওয়া যায়। একটি ছাগলের খামার দিতে হলে মাত্র হাজার টাকা খরচ করলেই মাচা পদ্ধতিতে ছাগলের খামার তৈরি করা সম্ভব।

মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন কেন করবেন? সংক্ষেপে এ বিষয়ে বলছি। মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করলে খুব ছোট জায়গাতেও বেশি সংখ্যক ছাগল পালন করা সম্ভব। এছাড়া খামার পরিষ্কার রাখতেও সুবিধা হয়। এই পদ্ধতিতে ছাগল পালন করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে যে ছাগলের মাঝে রোগ জীবাণুর বিস্তার অনেকটাই কমে আসে।

মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালনের সুবিধা

এই পদ্ধতিতে ছাগল পালন করলে রোগ জীবাণুর বিস্তার অনেকটাই কমে যায়। মাচা পদ্ধতিতে ছাগলকে মাটি থেকে কিছুটা উপরে বাঁশের তৈরি মাচার মেঝেতে রাখা হয়। এতে ছাগল সরাসরি মাটির সংস্পর্শে আসে না, মেঝেতেও পানি জমে না। যার কারণে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের রোগ দ্বারা ছাগলের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এছাড়া এই পদ্ধতিতে ছাগল ঠান্ডায় আক্রান্ত হয় না। এ প্রধান কারণ হচ্ছে যে ছাগলটি আর মাটির স্পর্শে নেই। ছাগলের বিভিন্ন রোগ, যেমন নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, সর্দি, কাশি ইত্যাদি থেকেও রক্ষা পাওয়ার সম্ভব যদি মাচা পদ্ধতিতে ছাগলের খামার তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতিতে ছাগলকে খাওয়ানো খুবই সহজ।

ছাগলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতেও মাচা পদ্ধতিতে খামার বানানোর কোন বিকল্প নেই। এই পদ্ধতিতে খামার বানানো হলে মাচার নিচে, এমনকি উপরেও সঠিকভাবে তাজা বায়ু চলাচল করতে পারে। তাজা বায়ু গ্রহণে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 

এছাড়া নিয়মিত বায়ু চলাচলের কারণে মাথার সব সময় শুষ্ক থাকে, ভেজা থাকে না। যা একটি সুস্থ পরিবেশকে নির্দেশ করে।

মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত হয়। এমনকি খামার পরিষ্কার করত বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না।

যখন একটি ছাগল মাচার উপর প্রসাব পায়খানা করে, তা মাচার ফাঁক দিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এতে মাচার উপর কখনো উচ্ছিষ্ট জমা হয় না। আবার মাথার নিচে পড়ে থাকা মল বা প্রসাব আমরা খুব সহজে পরিষ্কার করে ফেলতে পারি।

ছাগলের কৃমি, উকুন, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগ হর হামেশাই দেখতে পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করলে এই রোগগুলো থেকে খুব সহজে ছাগলকে বাঁচানো সম্ভব। মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালনের পরিবেশ খুবই সুস্বাস্থ্যকর ও উপযুক্ত হওয়ায় এসব রোগ দ্বারা ছাগলের আক্রান্ত হওয়ার অনেক কম।

মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালনের অসুবিধা

সত্যি বলতে গেলে মাথা পদ্ধতিতে ছাগল পালনের অসুবিধা বলতে তেমন কিছু নেই। এই পদ্ধতিতে এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করা হয়েছে যাতে ছাগল পালনে সর্বোচ্চ সুবিধা লাভ করা সম্ভব।

তবে একটু চিন্তা করলে কিছু অসুবিধার কথা অবশ্যই মাথায় আসবে। প্রথমত মাচা পদ্ধতিতে একটি খামার বানানো খুবই পরিশ্রম সিদ্ধ কাজ। অনেকেই এ পদ্ধতিতে খামার সঠিকভাবে খামার তৈরি করতে পারেন না।

আবার বাঁশের মাচা যদি দুর্বল হয়ে থাকে তবে যে কোনো দুর্ঘটনাও ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তবে এসব অসুবিধা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। উপযুক্ত পদ্ধতি এবং দক্ষ কারিগরি সহায়তা নিলে এ সকল দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

ছাগলের মাচার সঠিক মাপ ও তৈরিতে করণীয়

আপনি যদি একটি ছাগলের খামার মাচা পদ্ধতিতে তৈরি করার চিন্তা করেন, তবে আপনার উচিত সবার প্রথমে কতটি ছাগল একটি খামারে রাখবেন সেটি বিবেচনা করে খামারের পরিধি নির্ধারণ করা।

আবার আপনার খামারের জায়গা যদি আগে থেকে নির্দিষ্ট থাকে সেক্ষেত্রে খামার বানানোর পর কতগুলো ছাগল পালন করবে সেটাও নির্ধারণ করতে পারেন।

মনে রাখবেন, একটি ছাগলের জন্য খামারে সাত থেকে নয় বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন। এই হিসাবে আপনি আপনার খামারে কতগুলো ছাগল রাখতে পারবেন সেটি বের করে ফেলুন। সাধারণত ১৬ ফুট বাই ১২ ফুট জায়গায় ২০ টির মত ছাগল রাখা যায়।

অনেক বিশেষজ্ঞরা মাচা পদ্ধতিতে বানানো খামারের তিন দিকে বিভিন্ন রকম গাছ রোপন করতে বলেছেন। গাছ পরিবেশে বন্ধু গাছপালা লাগালে এর চারপাশের পরিবেশ ঠান্ডা হয় এবং বিশুদ্ধ বায়ু টেনে আনে। ছাগলের খামারে চারপাশে গাছ লাগানো উচিত। বিশেষ করে উত্তর দিকে ছোট বড় গাছ লাগানো যেতে পারে।

ছাগলের খামারের জন্য মাচা তৈরির সঠিক পদ্ধতি

ছাগলের জন্য যে মাচা তৈরি করবেন সেটি বাঁশের তৈরি হতে হবে। এর জন্য সবুজ কাঁচা বাঁশ ব্যবহার করা উত্তম। কেননা এই বাঁশ নমনীয় হওয়ার সত্ত্বেও অধিক টেকসই। এই বাসগুলোকে আপনি বছরের পর বছর ব্যবহার করতে পারবেন।

ছাগলের প্রসব পায়খানায় এই বাঁশের মাচাগুলো সহজে পচে যাবে না। নিয়মিত পরিচর্যা করলে এই বাঁশের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে এই বাঁশের মাথার উপর কিন্তু অনেকগুলো ছাগল একত্রে বসবাস করবে। তাই বাসের মাথা অবশ্যই শক্ত সামর্থ্য হতে হবে।

সেক্ষেত্রে মোটা বাঁশের মাচা তৈরি করা উত্তম। আরেকটি দিক লক্ষ্য রাখতে হবে যে মাটি থেকে বাঁশের মাচার উচ্চতা যেন এক হাত বা দেড় ফুট হয়। মাচার মধ্যে অবশ্যই ফাঁক রাখতে হবে। এই ফাঁকগুলো দিয়ে নিয়মিত তাজা বায়ু চলাচল করবে এবং ছাগলের মনোমুত্র নিচে মাটিতে পড়ে যাবে। তাই এই বিষয়টি মাচা তৈরি করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে।

একটি মাচা তৈরি করা কঠিন কোন কাজ নয়, যারা বাঁশের কাজ পারেন তারা খুব সহজেই আপনার জন্য একটি শক্ত সামর্থ্য বাঁশের মাচা তৈরি করে দিবেন। এই মাচা ব্যবহার করে একটি খামার দেওয়া তেমন কঠিন কোনো কাজ নয়।

ছাগল পালনে মাচা ব্যবহারের গুরুত্ব

মাচায় ছাগল পালন পদ্ধতি

একটি আদর্শ খামারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রোগমুক্ত ও সুস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করলে এই দুটি দিক নিশ্চিত করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে ছাগল পালন করা যেমন লাভজনক হবে, তেমনি ছাগলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে।

মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করা মোটেও ব্যয়বহুল কোন কাজ নয়। ছাগল পালনের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের পন্থা হচ্ছে মাচা পদ্ধতি।

মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করতে অনেক পশু চিকিৎসক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেননা এই পদ্ধতিতে ছাগল পালন করা খুবই স্বাস্থ্যকর এবং ছাগলের রোগ জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম।

একটি ছাগলের খামার ব্যর্থতা হয় ব্যর্থতার প্রধান কারণ হচ্ছে রোগ জীবাণু। একবার যদি কোনো খামারে রোগ জীবাণু প্রবেশ করে তবে পুরো খামারকে ধ্বংস না করে আর ছাড়ে না।

মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করলে ছাগলের সুস্বাস্থ্যতা নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি খামারির আর্থিক লাভও সুনিশ্চিত করে। আপনারা যারা প্রথম প্রথম ছাগলের খামার দেওয়ার কথা ভাবছেন তারা তাদের জন্য সুপরামর্শ হচ্ছে মাচা পদ্ধতিতে খামার দিয়ে ছাগল পালন করা শুরু করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *