শীতকালে পাখির যত্ন

শীতকালে-পাখির-যত্ন

বিশ্বব্যাপি কেজবার্ড বা খাঁচার পাখির কদর বেড়েই চলেছে। অনেক মানুষ এখন সৌখিনতার বসে পাখি পালন করতে গিয়ে ব্যাবসায়িক ভাবে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে। যেমনি ভাবে শখ পূরন হচ্ছে ,তেমনি অর্থ উপার্জনের সাথে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে অনেকে। আজকে আলোচনা করব শীতকালে পাখির যত্ন নিয়ে কিভাবে সুস্থ রাখা যায়।

কিভাবে বুঝবেন পাখিকে ঠাণ্ডা লেগেছে

  1. পাখিকে ঠাণ্ডা লাগলে পালক ফুলিয়ে বসে থাকবে।
  2. এক খাঁচায় অনেক পাখি থাকলে তারা গা লাগিয়ে পাশাপাশি বসে থাকবে।
  3. পাখির নাক দিয়ে হালকা পানি পড়তে দেখা যেতে পারে।
  4. ঠাণ্ডার কারণে গলার আওয়াজ স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।

শীতকালে পাখি সুস্থ্য রাখার উপায়

  1. সন্ধ্যা নামার আগে পাখি রাখার স্থানটি ভালো ভাবে ঢেকে রাখতে হবে, যেন কোনো রকম ঠাণ্ডা বাতাস প্রবেশ না করে।
  2. আবার পাখির যেন দম বন্দ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
  3. দিনের বেলা কুয়াশা না থাকলে পর্দা সরিয়ে রাখতে হবে যেন আলো বাতাস ঢুকতে পারে।
  4. পাখির ঘরের তাপমাত্রা অবশ্যই ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর মধ্যে রাখতে হবে।
  5. স্যাঁতসেঁতে যায়গায় পাখি রাখা যাবেনা, শুকনো ও পারিপাটি স্থান বেছে নিতে হবে।
  6. সপ্তাহে অন্তত একবার পাখির গায়ে রোদ লাগার ব্যবস্থা করা উত্তম, তাহলে পাখির মন ভালো থাকবে।
  7. সপ্তাহে একদিন (যেদিন রোদ থাকবে) পাখিকে গোসলের ব্যাবস্থা করতে হবে।
  8. পাখির গায়ে সরাসরি বাতাস যেন না লাগে সেই বিষয়টা খুব ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
  9. শীতকালে পাখিকে কোন অবস্থাতেই ঠাণ্ডা পানি খেতে দেওয়া যাবে না। সকাল বেলা হালকা গরম পানি দিতে হবে। একইভাবে বিকালবেলা পানি পরিবর্তন করে আবার হালকা গরম পানি দিতে হবে।
  10. রাতের বেলা পানির পাত্র সরিয়ে রাখতে হবে, নাহলে পাত্রের ঠাণ্ডা পানি খেয়ে পাখির সর্দি-কাশি হয়ে যেতে পারে।
  11. সপ্তাহে ২ দিন পানির সাথে মধু (হালকা গরম) এবং ২ দিন তুলসি পাতার রস (হালকা গরম) দিলে পাখি অনেকটাই সুস্থ থাকবে আশা করি।
  12. সকাল বেলা মাঝে মাঝে পাখির জন্য চা দেওয়া যেতে পারে। চায়ের মধ্যে লং, এলাচ, দারুচিনি, গোলমরিচ ইত্যাদি দিতে হবে।
  13. শীতকালে পাখির শরীর গরম রাখার জন্য খাবারের সাথে তেলজাতীয় বীজ দিতে হবে, যেমন সূর্যমুখীর বীজ, কুসুম ফুলের বীজ, গুজিতিল, কালোজিরা ইত্যাদি।
  14. শীতকালে পাখি বারান্দায় না রেখে ঘরের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করলে পাখিকে ঠাণ্ডা লাগার ভয় একদম থাকেনা।
  15. পাখির ঘরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করার জন্য সব সময় একটি থার্মোমিটার ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
  16. ঘরের তাপমাত্রা কোনভাবে ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর নিচে গেলে গরম বাতাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
  17. খুববেশী শীত পড়লে পাখিকে ব্রীড না দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

শীতকালে পাখির খাবার

শীতকালে পাখিকে এমন খাবার দিতে হবে যা পাখির শরীর গরম রাখবে এবং পাখিকে ঠাণ্ডার থেকে রক্ষা করবে।

  1. শীতকালে অনেক ধরনের শাকসবজি পাওয়া যায়। প্রতিসপ্তাহে কমপক্ষে ২-৩ দিন টাটকা শাকসবজি দিতে হবে।
  2. পাখির পছন্দের শাকসবজির মধ্যে পালং শাক, কলমি শাক, ধনেপাতা, বরবটি, শিম ইত্যাদি।
  3. অবশ্যই অবশ্যই খেয়াল করে তুলসি পাতা বা তুলশি পাতার রস দিতে হবে পাখিকে।
  4. পাখির সীডমিক্সে সূর্যমুখীর বীজের পরিমাণ দিগুন করে দিতে হবে যা পাখির শরীর গরম রাখবে।
  5. সপ্তাহে ২ দিন এগফুড দিতে হবে যা পাখির পুষ্টিচাহিদা মিটাবে সেইসাথে পাখিকে ঠাণ্ডার সাথে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।
  6. সফটফুড হিসবে সিদ্ধগম বা ভেজানো গম দেওয়া যেতে পারে।

মোট কথা পাখিকে ভালোবাসতে হবে নিজের মতো করে। তার চাওয়া পাওয়া গুলো অনুধাবন করতে হবে, বুঝতে হবে তার প্রয়োজন কি। নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে পাখিকে সময় দিতে হবে তাহলে আপনি একজন সফল পাখাল বা পাখি খামারি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *