ছাগলের সর্দি কাশির চিকিৎসা

ছাগলের সর্দি কাশির চিকিৎসা

গৃহপালিত প্রানী হিসেবে বাংলাদেশে ছাগল অত্যন্ত জনপ্রিয়। ছাগলের আকার মাঝারি হওয়ায় এটি পালন করা সহজ এবং ছাগল পালন খামারিদের কাছে সবচেয়ে লাভজনক। কিন্তু অনেক সময় ছাগল সর্দি কাশির মতো সাধারণ রোগে আক্রান্ত হয়, যা খামারির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, ছাগলের সর্দি কাশির চিকিৎসা ও প্রতিরোধ নিয়ে আমরা জানতে চলেছি।

এই লেখায় যা যা থাকছে–

  • ছাগলের সর্দি কাশির কারণ
  • ছাগলের সর্দি কাশি প্রতিরোধ
  • ছাগলের ঠান্ডা লাগলে করণীয়
  • ছাগলের কাশি হলে করনীয়
  • ছাগলের সর্দি কাশির চিকিৎসা
  • ছাগলের ঠান্ডা কাশির ঔষধ
  • ছাগলের সর্দি কাশির ট্যাবলেট এর নাম
  • ছাগলের সর্দি কাশির ঘরোয়া চিকিৎসা

ছাগলের সর্দি কাশি খুব সাধারণ একটি রোগ। কিন্তু এই সর্দি কাশি থেকে ছাগলটি কোনো জটিল রোগ বাধিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি নিউমোনিয়া হয়ে ছাগলের মৃত্যুও হতে পারে। তাই সর্দি কাশিকে অবহেলা করা উচিত নয়, বরং সময় থাকতে এর চিকিৎসা করাটাই শ্রেয়।

ছাগলের সর্দি কাশির ঘরোয়া চিকিৎসাও রয়েছে, যেগুলো অত্যন্ত কার্যকরী। তবে চিকিৎসা জানার আগে আমাদের জানতে হবে ছাগলের সর্দি কাশির কারণ সম্পর্কে।

ছাগলের সর্দি কাশির কারণ

১. স্থান পরিবর্তন

স্থান পরিবর্তন ছাগলের সর্দি কাশির অন্যতম প্রধান কারণ। সাধারণত আমরা ছাগল কিনে থাকি অন্য কোনো খামারির কাছ থেকে। এক্ষেত্রে এক খামার থেকে অন্য খামারে স্থানান্তরের কারণে একই সাথে ছাগলের বাসস্থান, খাদ্য, পানি ইত্যাদির পরিবর্তন হয়।

অনেক সময় এই নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে ছাগলের শরীর দূর্বল হয়ে যায়, ইমিউনিটি ক্ষমতা কমে যায় এবং সাধারণ রোগবালাই, যেমন সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

২. অপরিচ্ছন্নতা

ছাগলের সর্দি কাশির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অপরিচ্ছন্নতা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নানা রোগের কারণ। মানুষ হোক, কিংবা ছাগলের মতো কোনো প্রানী, একটি অপরিষ্কার স্থান রোগ-জীবাণুর আস্তানা।

যদি ছাগলের থাকার স্থানটি অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে তবে খুব সহজে ছাগল কোনো না কোনো রোগ বাধাবে। বিশেষ করে ছাগলের মল যদি নিয়মিত পরিষ্কার না করা হয় তবে এই মল থেকেও ছাগলের সর্দি-কাশির মতো রোগ হতে পারে।

৩. আবহাওয়া পরিবর্তন

আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে আমাদের মানুষেরও সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হবার প্রবণতা দেখা দেয়, ঠিক তেমনই ঘটে ছাগলের ক্ষেত্রেও। সাধারণত বর্ষাকাল ও শীতকালে আবহাওয়া জনিত কারণে ছাগলের সর্দি কাশিতে আক্রান্তের হার বেশি দেখা যায়।

৪. দূষিত বায়ু, ধুলোবালি বা পরাগরেণু

দূষিত বায়ু ও ধুলোবালি সর্দি কাশির অন্যতম একটি কারণ। যখন দূষিত বায়ু ও ধুলোবালি কোনো প্রানীর ব্রংকাইটিসে প্রবেশ করে তখন সর্দি কাশির মতো প্রদাহের সৃষ্টি করে। এই প্রদাহ অনেক সময় কষ্টকর হতে পারে।

এছাড়া ছাগলের খাবার– বিভিন্ন গাছের পাতায় অনেক সময় পরাগরেণু থাকতে পারে। এই পরাগরেণু ক্ষুদ্র, খালি চোখে দেখা যায় না, একবার শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে চলে গেলে এই পরাগরেণু প্রথমে ছাগলের কাশির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ছাগলটি ক্রমাগত কাশতে থাকে এবং এক পর্যায়ে সর্দির দ্বারাও আক্রান্ত হতে পারে।

ছাগলের সর্দি কাশি প্রতিরোধ

ছাগল যাতে সহজে সর্দি কাশিতে আক্রান্ত না হয়, সেজন্য আমরা আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। আমরা উপরে ছাগলের সর্দি কাশি লাগার কারণগুলো জেনেছি। উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে আমরা ছাগলের সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার হার প্রায় শূণ্যের কাছাকাছি পর্যন্ত নামিয়ে আনতে পারবো।

প্রথমত আপনাকে আপনার খামার বা ছাগল রাখার স্থান অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে এবং নিয়মিত পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতে হবে।

ছাগলকে বেশিভাগ সময় মাটির উপরেই বসে থাকতে দেখা যায়। এটিই বেশিভাগ ছাগলের ঠান্ডা লাগার প্রধাণ কারণ। তাই ছাগলের খামার বা ঘরটি মাটি থেকে এক ফুট উপরে মাচার উপর রাখবেন, যাতে মাটি থেকে ঠান্ডা ছাগলের শরীরে না পৌছে।

খামারে বা ছাগল রাখার ঘরে ঠান্ডা বাতাস বা বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে এমন কোনো ফাকা স্থান যদি থেকে তবে সেটি বন্ধ করার ব্যবস্থা করে ফেলুন। মেঝেতে যেন কাদা জমে না যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

খামারের আশেপাশে যদি কোনো কারখানা বা কোনো রাস্তা থাকে এবং সেখান থেকে দূষিত বায়ু বা ধুলোবালি খামারে প্রবেশ করে সেক্ষেত্রে আপনি পর্দা দিয়ে যথাসম্ভব প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন।

ছাগলের ঠান্ডা লাগলে করণীয়

কোনো ছাগল যদি ক্রমে ক্রমে কাশি দেয় এবং নাক দিয়ে শ্লেষা বা সর্দি বের হতে লাগে তবে ধরে নিবেন আপনার ছাগল ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়েছে।

এই অবস্থায় আপনার প্রথম পদক্ষেপ হবে আক্রান্ত ছাগলটিকে অন্যান্য ছাগল থেকে আলাদা করা এবং পরিষ্কার ও ধুলোবালিমুক্ত ফাকা কোনো ঘরে রাখা। সর্দিতে আক্রান্ত হলে ছাগলের শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, তাই ঘরটিতে তাজা বাতাস যেন চলাচল করে সেটির দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

আগেই বলেছি, সর্দি কাশি খুবই সাধারণ একটি রোগ। কিন্তু উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে এই সর্দি কাশি থেকে ছাগল বড় কোন রোগেও আক্রান্ত হতে পারে। এটি মূলত ছাগলের ইমিউনিটি ক্ষমতার উপর নির্ভর করে।

ইমিউনিটি ক্ষমতা বেশি এমন একটি ছাগল রোগবালাই থেকে খুব দ্রুত ঠিক হয়ে উঠতে সক্ষম। সাধারণত বাচ্চা ছাগল ও মা ছাগল সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হলে রোগের স্থায়ীত্ব বেশি দিন হয়, কারণ এদের ইমিউনিটি কম হয়ে থাকে।

ছাগল সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হলে দ্রুতই রোগ নিরাময়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আপনি চাইলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা চালাতে পারেন। কিংবা বিশেষ পরিস্থিতিতে ট্যাবলেট বা ইনজেকশন দিয়েও ছাগলের সর্দি কাশির চিকিৎসা করাতে পারেন।

নিচে আমরা তিনটি ওষুধের তালিকা দিয়েছি। এই ওষুধগুলো ব্যবহারে আপনার ছাগলটি তিন থেকে পাচ দিনের সর্দি কাশি থেকে মুক্ত হবে।

[ বিশেষভাবে দ্রষ্টব্যঃ যে কোন ওষুধ খওয়ানোর আগে বা টিকা দেওয়ার আগে অবশ্যই রেজিস্টার্ড প্রাণী চিকিৎসকের বা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ নিতে হবে এবং পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। বিপদের সময় দ্রুত সেবা পেতে প্রাণী চিকিৎসকের বা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বার আপনার কাছে অবশ্যই রাখবেন ]

ছাগলের সর্দি কাশির চিকিৎসা / ছাগলের সর্দি কাশির ট্যাবলেট

১. মক্সিলিন ভেট– এই ওষুধটির বোলাস ও ইনজেকশন দুই পদ্ধতিতেই দিতে পারবেন। বোলাস বা মুখে খাওয়ানোর ট্যাবলেট ছাগলের ওজনের প্রতি কেজি অনুযায়ী ৮ মিলিগ্রাম করে খাওয়াতে হবে দিনে দুইবার। আর ইনজেকশনের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ কেজি ওজনের বিপরীতে ১ মিলিগ্রাম পুশ করতে হবে ছাগলের মাংশপেশি, শিরা বা চামড়ায়।

২. সিপ্রো এ ভেট– এই ওষুধটির বোলাস ও ইনজেকশন দুই পদ্ধতিতেই দিতে পারবেন। বোলাস বা মুখে খাওয়ানোর ট্যাবলেট আক্রান্ত ছাগলটিকে প্রতি কেজি অনুযায়ী ৮ মিলিগ্রাম করে দিনে দুইবার খাওয়াবেন। এভাবে ৩ থেকে ৫ দিন এই ওষুধ টানা খাওয়াতে হবে। এছাড়া ইনজেকশনের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ কেজি ওজনের বিপরীতে ৭ মিলিগ্রাম পুশ করতে হবে ছাগলের মাংশপেশি, শিরা বা চামড়ায়।

৩. সাধারণ প্যারাসিটামল– যেকোনো দোকানে আপনি প্যারাসিটামল পেয়ে যাবেন, যা সর্দি কাশির ক্ষেত্রে  দুইবার করে প্যারাসিটামল ওষুধ দিতে পারেন সর্দি কাশি সম্পূর্ণ সেরে না যাওয়া পর্যন্ত।

ছাগলের সর্দি কাশির ঘরোয়া চিকিৎসা

আপনি জেনে অবাক হবেন, ট্যাবলেট বা ইনজেকশনের থেকেও শতভাগ কার্যকরী ছাগলের সর্দি কাশির ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে। আমাদের বাসাবাড়িতে বা আশাপাশেই আপনি অনেক সামগ্রী পেয়ে যাবেন যা দিয়ে ছাগলের সর্দি কাশি প্রতিরোধ করতে পারবেন।

সরিষার তেল সর্দি কাশি প্রতিরোধের এক জাদুকরী সামগ্রী। এই তেল আক্রান্ত ছাগলের নাকে লাগিয়ে দিলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই বন্ধ নাক খুলতে সাহায্য করবে। এছাড়া দিনে তিন-চারবার করে সরিষার তেল ছাগলের নাকে দিলে সর্দি কাশি থেকে দ্রুতই রেহাই মিলবে।

আরেকটি ভেষজ মিশ্রণ ছাগলকে খাওয়াতে পারেন, যেটি আক্রান্ত ছাগলের সর্দি কাশি নিরাময়ের পাশাপাশি ইমিউনিটি বাড়াতেও সাহায্য করবে।

আদা, তুলসি পাতা, কালজিরা, রসুন ও বাসক পাতা নিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে ফেলুন। ছাগলকে দৈনিক দুইবার করে খাওয়ালে প্রথম দিন থেকেই কার্যকারিতা লক্ষ্য করবেন। ছাগল সম্পূর্ণ সেরে ওঠা না পর্যন্ত এই ভেষজ মিশ্রণ ছাগলকে খাওয়াতে থাকুন।

তবে যেকোনো প্র‍য়োজনে আপনার এলাকার নিকটতম পশু হাসপাতাল বা কোনো পশু চিকিৎসকের নিকট যেতে ভুলবেন না।

3 thoughts on “ছাগলের সর্দি কাশির চিকিৎসা”

  1. আমার ছাগলের পেটের তলে শক্ত হাত দিলে মনে হয় চাইলের মতন কিছু। খাবার খাচ্ছে না হঠাৎ করে। জোপ ধরে দাঁড়িয়ে থাকছে গলায় গড় গড় শব্দ হচ্ছে এবং কি ছাগল কাশি দিচ্ছে। এই ক্ষেত্রে আমার করোনিয় কি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *