ছাগল পালন কি লাভজনক? ছাগল পালনে সফলতার চাইতে ব্যার্থতার কাহিনী বেশি সামনে আসে কেন ?
চলুন দেখি কেন এমনটা হয় এবং হয়েই যাচ্ছে!
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের খামারিদের ব্যার্থতার সব থেকে বড়ো কারণ হলো এটাই যে, তারা ইউটিউব, গুগল ঘেঁটে অত্যাধুনিক সেড নির্মাণ করেন সবার আগে! এটা সবথেকে বড়ো ভুল!
অনেক অনেক বার বলেছি, কে শোনে কার কথা ! অবশ্যই আধুনিক নিরাপদ সেড বানাতে হবে। কিন্তু সেটা শুরুতেই কেন?
সেটার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে হবে ! লভ্যাংশ জমিয়ে কয়েক বছর পরে করা যায় না?
কেন বহু খামার সুন্দর ভাবে শুরু করেও টিকে থাকতে পারছে না?
আমার মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি সম্ভাব্য কারণ গুলো :
- ছাগলের ছ জানেন না, কিন্তু বিশাল টাকা ইনভেস্ট করে শুরুতেই বড়ো সেড বানিয়ে ফেলা।
- ৪ ভাগ টাকার মধ্যে তিন ভাগ টাকা দিয়ে সেড বানানোর পর, ১ভাগ টাকাতে ছাগল কেনা। (ছাগলের কোয়ালিটি কেমন হবে সেটা আন্দাজ করে নেবেন, কারন সেড বানাতেই সিংহ ভাগ পুঁজি সুজি হয়ে গেছে)।
- দালাল খরচঃ নিজে ছাগল চেনে না ফলে দালালের খপ্পরে পড়াই লাগে। যাইহোক, বাকি সব টুকু পুঁজি দিয়ে হাটে গিয়ে খামারে পালন অযোগ্য ছাগল কিনে শেষ করে বাসায় ফেরা!
- এবার ধার দেনা করে অনেকেই ছাগলের খামার শুরু করেন, যারা বাপের টাকায় শুরু করেন তাদের ও কিছু দিন পর অর্থাভাব শুরু হয়। ঔষধ পথ্য, ডাক্তার খরচ, দানাদার খাদ্য, ঘাসের চাষ ইত্যাদি খরচ কিভাবে সম্ভব ?
- এতো টাকা ইনভেস্ট (ভুল পদ্ধতিতে বিনিয়োগ) করেও লাগাতার এক-দেড় বছর কোনো ধরনের উপার্জন আসবেনা, এটা ভুলে গিয়েই বেশির ভাগ খামার শুরু হয়।
- অর্থাৎ ছয় মাস পরই হাতশূন্য এবং এই সেক্টর কে গালাগালি ও দোষারোপ করে।
- আর একটা সব থেকে বড়ো সমস্যা হলো, কয়েকটি ইউটিউব ভিডিও দেখে নিজেদের অভিজ্ঞতার ভান্ডার মনে করা!
- যার ফল আমরা দেখতে পাই, খামারের অতি সামান্য সমস্যায় বাইরের ডাক্তার কে ডাকা!! যেটা নিজেই ঠিক করে নেওয়া যেতো সেটা ডাক্তার কে দিয়ে করিয়ে গাদা গাদা টাকা তার পকেটে গুঁজে দেওয়া! এতে প্রচুর টাকা নষ্ট হয়ে যায়… কিন্তু খামারি নিজের ভুল ছাগলের উপর চাপিয়ে গালাগালি করে এই সেক্টরটাকেই !
- দেশি ঘাস লতাপাতা কে গুরুত্ব না দিয়ে, বিভিন্ন বিদেশী হাইব্রিড জাতের ঘাস আমদানি করে বাড়তি খরচ শুরুতেই !
- শুরুতেই ২০-৫০ টা ছাগল তুলে বাঁশ খাওয়ার তাড়া।
- এলাকার বাজার ও চাহিদা না বুঝেই খামার শুরু করা।
- বিদেশি ছাগল হরিনের দাম দিয়ে কেনা এবং ভাব নিয়ে আমার কাছে এই আছে… সেই আছে… বলে ফুটানি করা ।
- খামার করবেন অথচ ছাগলের ঘরে যেতে নাকে রুমাল চেপে যাবেন, সামান্য কাজেও শ্রমিক ভাড়া করবেন! ছাগল চরাতে লজ্জা পাওয়া।
যারা নতুন উদ্যমে শুরু করতে চান তাদের জন্য কিছু কাজ বলে গেলাম !
- অনেক পড়াশুনা করতে হবে, জানার কোন বিকল্প নাই।
- প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করতে হবে।
- আবেগ কম, বুদ্ধিকে বেশি কাজে লাগাতে হবে।
- খামার উপযুক্ত ছাগল চেনা শিখতে হবে।
- পিউর ব্রিড চিনতে হবে।
- ভেজাল চিনতে হবে।
- ছাগলের জাত সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা অর্জন করতে হবে।
- খামারে পালন অনুপোযোগী ছাগল চিনতে হবে।
- ৫-১০ টা ব্ল্যাক বেঙ্গল, ক্রস বেঙ্গল দিয়ে শুরু করতে হবে। খুব ভালো মানের পাঁঠা সংগ্রহে কিপটামি করা চলবে না ! অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ধাপে ধাপে অন্যান্য জাতের দিকে এগোতে হবে। জন্মেই কেউ হাঁটা শেখে না, আগে হামাগুড়ি দিতে শেখা লাগে।
- কৃমি নিয়ন্ত্রণ, ঔষধ, ভ্যাক্সিন, রোগ-প্রতিরোধ, চিকিৎসা সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞ্যানার্জন করতে হবে।
- খাদ্য ও খাদ্যের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে হবে ।
- ছাগলের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন করা শিখতে হবে! এটার মাঝেই সফলতা লুকিয়ে থাকে।
- বানিজ্যিক ভাবে ছাগল পালন শুরু করার আগে পারিবারিক ভাবে পরিক্ষামুলক পালন শুরু করবেন ছোট পরিসরে।
- এটা ছাড়াও আলাদা আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করতে হবে, সেটা চাকরি হতে পারে বা ব্যবসা। সম্ভব না হলে সমন্বিত খামার করতে হবে। যেমন আয়ের উৎস হিসেবে ছাগলের পাশাপাশি একটা বা দুইটা দুধের গাভি পালন, ছোট পরিসরে মাছের চাষ, হাঁস মুরগি পালন, শাক সবজি চাষ, বারোমাসি লেবু, কলা বা পেঁপে চাষ ইত্যাদি যেটাতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এতে আপনার উপার্জন টা রোলিং থাকবে।
- নিজের সম্পর্কে জানা, নিজেকে ভালোবাসা, নিজের প্রতি যত্নশীল ও নিজের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে, আত্মবিশ্বাসী হতে হবে, জেদী ও পরিশ্রমী মনোভাব পোষণ করতেই হবে !
পরিশ্রমীদের কাছে কোনো বাধাই বাধা নয়, চেষ্টা থাকলে ইনশাআল্লাহ সফল হবেন! অবশ্যই পরিবারের বড়োদের সাথে সুপরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নেবেন !
আমি বেশ কয়েক বছর ধরে পারিবারিকভাবেই পরীক্ষামূলক ছাগল পালন করে আসছি আলহামদুলিল্লাহ .. সফলতার সাথেই
আগামীতে একটা খামার গড়ে তুলতে চাই ইনশাআল্লাহ!
নিশ্চয়ই আপনি বুঝে গেছেন ছাগল পালন কি লাভজনক নাকি অন্য কিছু।