ছাগলের বাচ্চার যত্ন কিভাবে নিতে হয়? – বিস্তারিত গাইডলাইন

ছাগলের বাচ্চার যত্ন

একটি ছাগলের খামারের উন্নিত নির্ভর করে খামারের সুস্থ বাচ্চার উপর। সেজন্য ছাগলের বাচ্চার যত্ন নেওয়ায় একটু অবহেলা করা যাবে না। যে খামারে বাচ্চার মৃত্যুর হার যত কম সেই খামার ততই দ্রুত সফলতার মুখ দেখে। তাই বাচ্চা ছাগলের যত্ন কিভাবে নিতে হয় সে ব্যপারে আমাদের সবার পরিষ্কার ধারণা দরকার । আসুন জেনে নেই ছাগলের বাচ্চার যত্নে আমাদের কি কি করতে হবে।

ছাগলের বাচ্চার যত্নে যা যা করতে হবেঃ

১। ছাগলের বাচ্চা প্রসবের পর বাচ্চা শ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছে কি না সেটা ভাল করে লক্ষ করতে হবে । শ্বাস প্রশ্বাস না নিলে মুখে বাতাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

২। বাচ্চার গায়ে লেগে থাকা আঠালো তরল পদার্থ মা ছাগল তার মুখ দিয়ে পরিষ্কার না করলে, পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত শুকনো কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে।

৩। বাচ্চাকে পরিষ্কার করার পর এর নাভির ৩-৫ সে.মি. নিচে পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কাঁচি দিয়ে কেটে দিতে হবে, সেই সাথে পায়ের ক্ষুরও কেটে দিতে হবে। এবং কাটা অংশে জীবাণুনাশক ওষুধ লাগাতে হবে ।

৪। বাচ্চার জন্মের ১-২ ঘণ্টার মধ্যেই শাল দুধ পান করাতে হবে। বাচ্চা প্রসবের পর প্রথম যে দুধ ছাগীর ওলান থেকে আসে তাকে শাল দুধ বলে।

৫। যদি দুর্বলতার কারণে বাচ্চা দাঁড়াতে বা দুধ পান করতে না পারে তবে ছাগী থেকে দুধ দোহন করে তা বোতলে ভরে পান করাতে হবে।

৬। বাচ্চাকে মায়ের সাথে রাখতে হবে এবং প্রথম সাত দিন ঘরে বাড়তি তাপমাত্রার ব্যবস্থা করতে হবে। শীতকালে আরও বেশি যত্নবান হতে হবে নাহলে ঠাণ্ডা লেগে ছাগলের বাচ্চার সর্দি কাশি হয়ে যেতে পারে।

৭। বাচ্চার যেন নাভি পচা রোগ না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে, সেজন্য প্রথম ১ সপ্তাহ প্রতিদিন ২-৩ বার করে নাভি টা দেখতে হবে।

৮। বাচ্চা যেন অতিরিক্ত দুধ না খেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অতিরিক্ত দুধ খাওয়ার ফলে বাচ্চার ডায়রিয়া হতে পারে যা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৯। একাধিক বাচ্চা হলে সব বাচ্চা যেন সমান পরিমাণ দুধ পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, দরকার হলে অন্য ছাগী থেকে দুধ খাওয়াতে হবে।

১০। বাইরে থেকে দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে ফিডার এবং নিপল গরম পানিতে ফুটিয়ে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

১১। ১ সপ্তাহ পর অল্প অল্প করে কচি কাঁচা ঘাস দিতে হবে ঘাসের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য। ১৪-১৫ দিন বসয় থেকে একটু একটু করে ঘাস খাওয়া শিখে যাবে।

১২। ১ মাস বয়স হলে বাচ্চার ওজনের ১% করে দানাদার খাবার দিতে হবে।

১৩। বাচ্চাকে অবশ্যই পি পি আর ও ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে। মা ছাগলের টীকা দেওয়া থাকলে বাচ্চার টীকা দেওয়ার দরকার নাই। তবে ৬ মাস পর অবশ্যই টীকা দিতে হবে।

১৪। অসুস্থ ছাগল থেকে অবশ্যই বাচ্চাকে দূরে রাখতে হবে ।

১৫। ছাগলের বাচ্চার মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো ডায়রিয়া, ডায়রিয়া থেকে বাচতে হলে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখতে হবে।

১৬। ডায়রিয়া হলে বার বার স্যালাইন (প্রতিবারে ২০-৫০মিলি) খাওয়াতে হবে।

baby-goats

শেষের কথাঃ

বাচ্চা ছাগলই খামারের আসল ফসল। কিন্তু বাচ্চা বয়সে ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়া বাচ্চা মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এজন্য বাচ্চাদের সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখতে হবে। ঠাণ্ডা বাসী খাবার কখনই খাওয়ানো যাবে না। খুব অসুস্থ হলে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে । ছাগল পালন আপনার জীবনে সাফল্য বয়ে নিয়ে আসুক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *